Sunday, November 16, 2025

সাইপ্রাস-সিঙ্গাপুরে এস আলমের নাগরিকত্ব, দেশে নেন স্থায়ী বসবাসের সুবিধা

Share

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম সপরিবার সাইপ্রাস ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। দেশ দুটিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমোদন না থাকায় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম সপরিবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন।

আবার একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন নেন। ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য এস আলম সাইপ্রাস ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকতে পারেন বলে বিশ্বেষকরা মনে করছেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন।

নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী বসবাসের সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্র এবং আরও বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়, যা এক দিনে সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। কীভাবে এক দিনে দুটি জটিল কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ করলে যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সেই বাধা এড়াতেই এস আলমের পরিবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেয়।

জানা গেছে, সাইপ্রাস ২০০৭ সালে গোল্ডেন পাসপোর্ট কর্মসূচি চালু করে। সে সুযোগ নিয়ে ২০০৯ সালে এস আলম ও ফারজানা পারভীন ওই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

এছাড়া সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা হিসেবে তারা ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এতে এস আলম ও তার স্ত্রী যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

সূত্রমতে, বাংলাদেশে বিদেশিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ কমপক্ষে ৭৫ হাজার হাজার মার্কিন ডলার অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ থাকতে হবে।

এছাড়াও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ প্রয়োজন হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রের মাধ্যমে।

এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আবেদনকারী স্থায়ী আবাসিক সুবিধা অধিকারের জন্য সনদ প্রদানের জন্য সরকারকে সন্তুষ্ট করেছেন। সেহেতু, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশ ১৪৯-এর অনুচ্ছেদ ৪এ-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং ওই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত ১৯৭৮ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশের ৪ (বি) অনুযায়ী আবেদনকারীকে স্থায়ী আবাসিক অধিকার প্রদান করা হলো এবং তিনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে, সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।’

অনুমোদনপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।

বাংলাদেশে এস আলম পরিবারের মালিকানাধীন ৫৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহসানুল আলম।

শেখ হাসিনা সরকারে পতন হলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেইসঙ্গে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সরকার।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/এফএ)

Read more

Local News