নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ছাত্র ঐক্য সংসদের আড়ালে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশে নোবিপ্রবি শাখা।
বৃহস্পতিবার ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নোবিপ্রবি শাখার সভাপতি মো. খলিল মাহমুদের সভাপতিত্বে ক্যাম্পাসে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির শূরা সদস্য এবং নোবিপ্রবি শাখার সাবেক সভাপতি এস এম রাসেল।
লিখিত বক্তব্যে এস এম রাসেল বলেন, ‘ছাত্র ঐক্য সংসদের আড়ালে স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগকে পূনর্বাসনের পায়তারা চলছে।’ তিনি জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি বন্যার্ত অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য এলে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যাত্র বিরতি করেন এবং দায়িত্বশীলদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই সময় তিনি কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সভা-সমাবেশ করেননি।
এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একদল কুচক্রি মহল সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করে ক্যাম্পাসে গভীর রাতে অস্থীতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে এই সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশধারী কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
এস এম রাসেল প্রশ্ন তোলেন, ‘ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধি শক্তিশালী প্লাটফর্ম থাকার পরেও অবৈধ এবং স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কীভাবে গভীর রাতে বিক্ষোভ মিছিল করার সাহস পায়? এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলন নোবিপ্রবির ভূমিকা কী ছিল?’
এস এম রাসেল বলেন, ‘আমরা জানি নোয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের প্রায় ১১ জন সমন্বয়ক ছিল। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন জাহিদুল ইসলাম হাসান। যিনি এখন স্বৈরাচারী ছাত্র ঐক্য সংসদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের মিছিলে জাহিদুলসহ দুজনকে দেখতে পেয়েছি আমরা। তাহলে বাকিদের অবস্থান কী? এই সমন্বয়কদের ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সংগঠন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতিকে আমরা প্রমোট করতে পারি না। এমনকি নোবিপ্রবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি রেজুলেশন বা আইনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি চায় তাহলে আমরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবো না। এক্ষেত্রে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও রাজনীতি করতে পারবে না। শুধুমাত্র ইসলামকে ধারণ করার কারেণে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনকে টার্গেট করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
এস এম রাসেল বলেন, বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনে আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করে। সেখানে অন্যান্য মতেও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সুতরাং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয় এবং স্বৈরাচারের দোসর নয় এমন কারো জন্য ক্যাম্পাস কোনো নিষিদ্ধ জায়গা হতে পারে না। রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হয় তাহলে সকল লেজুরভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
নোবিপ্রবি ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপিনেতারা ক্যাম্পাসে আশ্রিত বন্যার্তদের ত্রাণ করেছে। ছাত্রলীগের পদধারী নেতারা ত্রাণ বিতরণ করেছে। তখন কেউ প্রতিবাদ করেনি। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতার যাত্রাবিরতিতে কেন তাদের গাত্রদাহ হবে। সুতরাং, ছাত্র ঐক্য সংসদের আড়ালে এরা যে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনার্বাসনের কাজ করছে তা সুস্পষ্ট।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
এক. নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ মর্মে কোনো অফিশিয়াল রেজুলেশন বা আইন প্রণয়ন হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করতে হবে। দুই. মধ্যরাতের এই বিক্ষোভ করার জন্য তারা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করতে হবে।
তিন. ক্যাম্পাসে বর্তমান স্বৈরাচার দোষর মুক্ত শক্তিশালী প্রশাসন থাকার পরও কীভাবে অবৈধ, অনুমোদনহীন সংগঠন গভীর রাতে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসলীগদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং প্রশাসনিক ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় তালা দেওয়ার হুমকির মতো দুঃসাহস করে? তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ এই অবৈধ অনুমোদনহীন সংগঠন বিলুপ্তি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে এটা নোবিপ্রবি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি।
চার. ক্যাম্পাসে বর্তমান ক্লাবগুলোর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ মুক্ত ক্লাব নিশ্চিত করতে হবে। পাঁচ. তারা আমাদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, এর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নোবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমানসহ আরও অন্যান্য দায়িত্বশীল এবং নোয়াখালী সরকারী কলেজ ও জেলা শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/এসআইএস)

