Saturday, April 19, 2025

বিটিআরসি লাইসেন্সের জন্য স্টারলিংকের আবেদন

Share

দেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দ্রুত চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্টারলিংক।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী গতকাল মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তারা গত সপ্তাহেই আবেদন করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে।’

এর আগে গত ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুমোদন পায়।

কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্টারলিংককে এখন কেবল দেশের ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

বিটিআরসির অনুমোদন পেলে গত ২৫ মার্চ প্রণীত নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স পাওয়া প্রথম প্রতিষ্ঠান হবে স্টারলিংক।

এই নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদন ও প্রক্রিয়াকরণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা, লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ডলার এবং বার্ষিক ফি ৩০ হাজার ডলার।

এ ছাড়া, প্রতিটি টার্মিনালের জন্য বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি হিসেবে এক ডলার করে আদায় করা হবে। তবে শুধুমাত্র আইওটি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত টার্মিনালের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।

যদি কোনো লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের গেটওয়ে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের জন্য সরকারের মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত থাকে অথবা কোনো বাংলাদেশি স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব বা উদ্যোগ গড়ে তোলে, তাহলে আবেদন, প্রক্রিয়াকরণ, লাইসেন্স গ্রহণ ও বার্ষিক ফি থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

লাইসেন্সধারীদের প্রথম দুই বছর কোনো আয় ভাগাভাগির বাধ্যবাধকতা থাকছে না। তবে তৃতীয় থেকে পঞ্চম বছর পর্যন্ত মোট আয়ের তিন শতাংশ এবং ষষ্ঠ বছর থেকে আয়ের সাড়ে পাঁচ শতাংশ সরকারকে দিতে হবে।

এনজিএসও লাইসেন্সের পাশাপাশি স্টারলিংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট স্যাটেলাইট সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি নিতে একটি আলাদা রেডিও কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি লাইসেন্সও নিতে হবে।

মার্চে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস নির্দেশনা দেন যে, স্টারলিংক যেন ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, প্রায় অর্ধডজন বৈশ্বিক স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেবা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল স্টারলিংকই আবেদন করেছে।

২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে স্টারলিংক।

গত বছর এপ্রিলে বিটিআরসি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের অনুমোদন দেয়, যারা স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত হয়।

চূড়ান্ত নীতিমালায় স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারীদের ইন্টারনেট ট্রাফিক স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করতে এবং ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য একটি আইআইজিতে সংযুক্ত হতে বলা হয়েছে।

এই বিধান থাকায় বর্তমান আইনি সুযোগের পাশাপাশি কারিগরি দিক থেকেও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করতে পারবে সরকার।

তবে, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বর্তমান সরকার।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক মুহূর্তের জন্যও ইন্টারনেট বন্ধ করতে চায় না এবং ভবিষ্যতে এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা প্রতিরোধে কাজ করছে।’

ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের একটি সেমিনারে  দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে সরকারের চারটি উদ্যোগ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—আসন্ন সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, ইন্টারনেট বন্ধের অনুমতি দেওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি বাতিল করা, এনজিএসও লাইসেন্স নির্দেশিকায় ইন্টারনেট বন্ধের ধারা বাদ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধের সুযোগ বাদ দিতে টেলিকম আইন সংশোধন করা।

টেলিকম নীতিবিষয়ক বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসেইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংক আসা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বড় উদ্যোগ।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু, স্থানীয় ব্রডব্যান্ড তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় বাজার ধরতে স্টারলিংকের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে জায়গা করে নিতে স্টারলিংককে প্রতিযোগিতামূলক দামে ইন্টারনেট দিতে হবে।’

Read more

Local News