‘বিনাসুদে ১ লাখ টাকা ঋণ’ দেওয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত সাধারণ মানুষকে ঢাকায় আনার অভিযোগ উঠেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে।
রবিবার মধ্যরাত ও সোমবার সকালে দরিদ্র ও অসহায় এসব মানুষ চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাস–মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসেন। তারা রাজধানীর শাহবাগ ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে- এমন আশ্বাস দিয়ে পরিচিত ব্যক্তিরা তাদের ঢাকায় আনলেও ওইসব মানুষদের খোঁজ মিলছে না।
যদিও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেওয়া এসব মানুষকে বাড়ি ফিরে যেতে বলছে পুলিশ। সেই সঙ্গে এমন অদ্ভুত ঘটনার পেছনে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে তৎপর দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
সোমবার শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাস–মাইক্রোবাসযোগে ঢাকার বাইরে থেকে শত শত মানুষকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তারা বিচ্ছিন্নভাবে শাহবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন। এমনকি সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত একাধিক বাসে করে এমন অচেনা নারী–পুরুষকে শাহবাগের উদ্দেশ্যে আসতে দেখা গেছে। তাদের বলা হয়েছিল, শাহবাগে আজ সকাল ১০টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে, যেখানে ঋণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঢাকায় আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিও সংস্থার পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যক্তি সাধারণ মানুষকে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। তারা বলেছেন, ঢাকায় গেলে বিনা সুদে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। অনেকের কাছ থেকে এ জন্য ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা গাড়িতে করে ঢাকায় এসেছেন।
মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় আসা এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোস্তফা আমিন নামে একজন ব্যক্তির মিটিং আছে সকাল ১০টায়। এ কথা বলে তাদের ফরম পূরণ করিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মোস্তফা ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক বলে জানা গেছে।
একইভাবে পাবনা থেকে আসা মানুষেরা জানান, তাদেরও ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে আসা লোকজনের ভাষ্যমতে, আজিজ নামে এক ব্যক্তি তাদেরকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগে পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন।
অন্যান্য জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনটি বাসে করে মানুষ আনা হয় ঢাকায়। দুটি বাস যাত্রীসহ ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঢাবি প্রক্টোরিয়াল টিম, শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মিলে এগুলো ফেরত পাঠায়। একটি বাস এখনও জব্দ আছে।
শাহবাগ মোড়ে আসা বাস ও মাইক্রোবাস পৌঁছানোর পর দেখা যায়, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি ব্যানার টাঙানো। ওই ব্যানারের মাধ্যমে জানানো হয়, লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত এনে ঋণ দেওয়া হবে। এ আশ্বাসে বিশ্বাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষরা শাহবাগ মোড়ে সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ সোমবার সকালে বলেন, “তাদেরকে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে ষড়যন্ত্র করে ক্যাম্পাসে জড়ো করা হয়েছিল। পরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চারজনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য এ পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে রাত থেকেই তোলপাড় চলছে ঢাবিকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মধ্যরাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাস ভর্তি অপরিচিত মানুষ দেখা যাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ড রহস্যজনক। এরপরই অনেকে হল থেকে রাজু ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নেন।
ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ও আশপাশের এলাকা থেকে সমাবেশে লোক জড়ো করার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়াও শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। সেখানে সোমবার সমাবেশের কথা জানানো হয়।
ঢাকায় আসা মানুষের কাছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ সংগঠনের ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট পাওয়া যায়। তাদের হাতে ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করব, বিনা সুদে পুঁজি নেব’।
জানা গেছে, বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার নামে ঢাকায় সমাবেশে লোকজন জড়ো করার নেপথ্যে কাজ করেছেন ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক ও অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান সংগঠক আ ব ম মোস্তফা আমীন ও সদস্য সচিব মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
সংগঠনের নেতারা কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকায় মানুষ জমায়েতের পরিকল্পনা করছিলেন। মোস্তফা আমীন গত ১৫ নভেম্বর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দেন, ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ শাহবাগ মোড়ে, সকাল ১০টায়। ইতিহাসে নাম লিখান।’
(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এসএস/এফএ)