মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত হলেন এ এফ হাসান আরিফ। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে মুয়াজ আরিফ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ।
মুয়াজ আরিফ বলেন, ‘আমরা এক ভাই, এক বোন। ছোট থেকেই কোর্টের একটা আবহে বড় হয়েছি। বাবার কাছে আমাদের কোনো প্রয়োজন থাকলে কেবল শনিবার বলতে পারতাম। বাবাকে কাছে পেতে শুরু করেছি যখন থেকে আমি তার সঙ্গে চেম্বারে কাজ করা শুরু করি। তিনি সবসময় কোর্টে ও চেম্বারেই ব্যস্ত থাকতেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি কেমন, তা দেশের সবাই জানেন। বাবা সবসময় আমাদের খেয়াল রাখতেন। আমি বিশ্বাস করি, বাবার রেখে যাওয়া কর্মে দেশ সবসময়ই উপকৃত হবে।’
এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
রাষ্ট্রীয় শোক পালন উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক এটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ২১ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, আরও দুই দফা তার জানাজা হয়।
২০ ডিসেম্বর দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, পাবলিক আস্বাদন, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।