News

Company:

Monday, April 7, 2025

শব্দ সরিয়ে নিলেই ভয়াবহতা সরিয়ে ফেলা যায় না

Share

ঢাকার পুলিশ কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ তার কাছে শুনতে ভাল লাগে না। কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গতকাল বলেছেন, এর বদলে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ বা ‘নারী নির্যাতন’ বা এধরনের শব্দ ব্যবহার করা যায়।

বিষয়টা কিছুটা এরকম হয়ে যায়, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার বললে খারাপ লাগবে তাই রোগীকে বললেন তার “রক্তকোষের ভারসাম্যহীনতা” দেখা দিয়েছে। এতে কি রোগীর কোনো উপকার হবে?

ডিএমপি কমিশনারের উদ্দেশ্য হয়তো সামাজিক অস্বস্তি কমানো কিংবা আতঙ্ক প্রশমিত করা। কিন্তু এতে আসল সমস্যার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া হয়। ‘ধর্ষণ’ শব্দটি শ্রুতিমধুর হবার কোনো কারণ নেই। অপরাধটিও ভয়াবহ। শব্দ বদলালে অপরাধ কমে না, বরং তার গুরুত্ব হালকা হয়ে যায়।

এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ভাষা বদলানো মানে বাস্তবতাকে ধোঁয়াশায় ঢেকে ফেলা। ‘ধর্ষণ’-এর মতো সহিংস অপরাধকে ঘুরিয়ে বললে অপরাধের ভয়াবহতা ও ভুক্তভোগীর যন্ত্রণা লঘু হয়ে যায়। ভাষার মধ্যে দিয়েই তো প্রাথমিক উপলব্ধি তৈরি হয়। তাই স্পষ্টতা অপরিহার্য।

সংবাদমাধ্যমের বড় দায়িত্ব, এই ধরনের গুরুতর বিষয় নিয়ে সঠিকভাবে তথ্য তুলে ধরা। এখানে সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট শব্দই যথাযথ। এতে অপরাধের গুরুত্ব বোঝানো, ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতার প্রতি সহানুভূতিশীল, শ্রদ্ধাশীল থেকেও অপরাধীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।

আইনি ভাষাতেও এসব অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে লেখা হয়। যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন কোনো ধোঁয়াশা রাখে না, যাতে অপরাধ নির্ধারণ, বিচার ও ভুক্তভোগীর অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো, অপরাধের ভয়াবহতা লঘু করে দেখানো কি শুধুমাত্র অন্যদের অস্বস্তি কমানোর জন্য যুক্তিযুক্ত?

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৩টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এটি নতুন কোনো সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘদিনের সংকট। বর্তমান আলোচনাও সম্ভবত জনমনে তৈরি হওয়া উদ্বেগের প্রতিফলন।

সমাজের কোনো দিক যদি অগ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাহলে সেটিকে আড়াল করা সমাধান হতে পারে না। সমস্যার সমাধান শুরু হয় সেটি স্বীকার করার মাধ্যমে। বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সমস্যাগুলো আরও গভীর হয়, এবং হয়েছেও।

যদি ডিএমপি প্রধানের পরামর্শ মেনে নেওয়া হয়, তাহলে কোথায় গিয়ে থামবে? ‘খুন’কে ‘শারীরিক আক্রমণ’, আর ‘ডাকাতি’কে ‘সম্পদ পুনর্বণ্টন’ বলা হবে? আরও কত শব্দ বদলাতে হতে পারে?

কমিশনারের বক্তব্য হয়তো ভালো উদ্দেশ্যেই ছিল, কিন্তু তাতে উল্টো কাজ হবে। সংবাদমাধ্যমের কাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরা, কঠিন সত্যগুলো আড়াল করা নয়।

শব্দ এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো সমাধান নেই।

Read more

Local News